আমরা মানুষেরা ঠিক কেমন?
মানুষ পরিবর্তন হতে পারে। মানুষ ঈশ্বরের সাথে তাদের সম্পর্ক বদলাতে পারে। এটি প্রমাণের জন্য “পূর্বে এবং পরে” এর সাথে সম্পর্কিত দুইটি ঘটনা রয়েছে যার উপর আলোকপাত দেওয়া প্রয়োজন। প্রথমটি হল যখন মানুষ ইডেনের বাগানে পাপ করেছিল, আর দ্বিতীয়টি হল যখন মানুষটি যিশুখ্রীষ্টের বলিদানে বিশ্বাসের ফলে রক্ষা পেল। অতএব, এই পাঠে আমরা মানুষের কিছু বাস্তবতা জানব:
১। ইডেনের বাগানে পাপ করার পূর্বে
২। ইডেনের বাগানে পাপ করার পর
নিচের শ্লোকগুলি বিশ্লেষণ করে, আমরা কিছু বাস্তবতা লক্ষ করিঃ
১। ইডেনের বাগানে পাপ করার পূর্বে
ঈশ্বর একটি বাগান তৈরি করেছিলেন এবং সেখানে কাজ করার জন্য মানুষটিকে রেখে ছিলেন।
«8 আর সদাপ্রভু ঈশ্বর পূর্বদিকে, এদনে, এক বাগান তৈরী করলেন এবং সেই জায়গায় নিজের জন্য ঐ মানুষকে রাখলেন।» (আদিপুস্তক ২: ৮) «15 পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে নিয়ে এদনের বাগানে কৃষিকাজ ও দেখাশোনার জন্য সেখানে রাখলেন।» (আদিপুস্তক ২: ১৫)
ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করলেন এবং পৃথিবীর উপর তাদের আধিপত্য দিলেন,
26 পরে ঈশ্বর বললেন, “আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে, আমাদের সঙ্গে মিল রেখে মানুষ সৃষ্টি করি; আর তারা সমুদ্রের মাছদের ওপরে, আকাশের পাখিদের ওপরে, পশুদের ওপরে, সমস্ত পৃথিবীর ওপরে ও ভূমিতে চলাচলকারী যাবতীয় সরীসৃপের ওপরে কর্তৃত্ব করুক।”
27 পরে ঈশ্বর নিজের প্রতিমূর্ত্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করলেন;
ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতেই তাকে সৃষ্টি করলেন,
পুরুষ ও স্ত্রী করে তাদেরকে সৃষ্টি করলেন।
28 পরে ঈশ্বর তাদেরকে আশীর্বাদ করলেন; ঈশ্বর বললেন, “তোমরা ফলবান ও বহুবংশ হও এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও কর্তৃত্ব কর, আর সমুদ্রের মাছদের ওপরে, আকাশের পাখিদের ওপরে এবং ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর ওপরে কর্তৃত্ব কর।” (আদিপুস্তক ১: ২৬-২৮).
ঈশ্বর তাদের নির্দেশনা দিলেন যে তারা সবগুলি থেকে খেতে পারবে (এমনকি জীবন বৃক্ষ) কিন্তু ভালো এবং মন্দ জ্ঞানের গাছগুলি থেকে নয়। «16 আর সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে এই আদেশ দিলেন, “তুমি এই বাগানের সব গাছের ফল নিজের ইচ্ছায় খাও; 17 কিন্তু সদসদ-জ্ঞানদায়ক যে গাছ, তার ফল খেও না, কারণ যে দিন তার ফল খাবে, সেই দিন মরবেই মরবে।”» (আদিপুস্তক ২: ১৬ এবং ১৭)।
অতএব,
১। ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টই করেছেন
২। তিঁনি তার তৈরি করা বাগানে তাদের রাখেন।
৩। তিঁনি তাদের পৃথীবির উপর আধিপত্য করার দায়িত্ব দিলেন, এবং
৪। তাদেরকে নিষেধাজ্ঞা দিলেন।
এর অর্থ হল যে ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে একটি বৈরিতামুক্ত সম্পর্ক ছিল।এতটাই মিথস্ক্রিয়া ছিল যে তার মাধ্যমে তাঁরা উভয়েই যোগাযোগ করতেন, কারন আদিপুস্তক ৩: ২,৩ এ, ইভ বলেন যে ঈশ্বর প্রদত্ত নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত নির্দেশনাগুলি বুঝেছিলেন। এছাড়াও, তাঁরা উভয়েই (এডাম এবং ইভ) আদিপুস্তক ৩: ৮ এ ঈশ্বরের কন্ঠ চিনতে পেরেছিলেন, যেখানে বলা হয় যে এটি তাঁদের কাছে পরিচিত ছিল।
আদিপুস্তক ৩: ২ এবং ৩ বলে: «2 নারী সাপকে বললেন, “আমরা এই বাগানের সব গাছের ফল খেতে পারি; 3 কেবল বাগানের মাঝখানে যে গাছ আছে, সেই ফলের বিষয় ঈশ্বর বলেছেন, তোমরা তা খেও না, ছুঁয়েও দেখ না, তা করলে মরবে।”» এবং আদিপুস্তক ৩: ৮: «8 পরে তাঁরা সদাপ্রভু ঈশ্বরের রব শুনতে পেলেন, তিনি দিনের রবেলায় বাগানে চলাফেরা করছিলেন; তাতে আদম ও তাঁর স্ত্রী সদাপ্রভু ঈশ্বরের সামনে থেকে বাগানের গাছ সকলের মধ্যে লুকালেন।»
২। ইডেন বাগানে পাপ করার পর
এডাম এবং ইভ বাগানে ঈশ্বরের কন্ঠ শুনে লুকিয়ে পরেন।
8 পরে তাঁরা সদাপ্রভু ঈশ্বরের রব শুনতে পেলেন, তিনি দিনের রবেলায় বাগানে চলাফেরা করছিলেন; তাতে আদম ও তাঁর স্ত্রী সদাপ্রভু ঈশ্বরের সামনে থেকে বাগানের গাছ সকলের মধ্যে লুকালেন। 9 তখন সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে ডেকে বললেন, “তুমি কোথায়?” 10 তিনি বললেন, “আমি বাগানে তোমার কথা শুনে ভয় পেলাম, কারণ আমি উলঙ্গ, তাই নিজেকে লুকিয়েছি।”
(আদিপুস্তক ৩: ৮-১০)
11 তিনি বললেন, “তুমি যে উলঙ্গ, এটা তোমাকে কে বলল?” যে গাছের ফল খেতে তোমাকে বারণ করেছিলাম, তুমি কি তার ফল খেয়েছ? 12 তাতে আদম বললেন, “তুমি আমার সঙ্গিনী করে যে স্ত্রীকে দিয়েছ, সে আমাকে ঐ গাছের ফল দিয়েছিল, তাই খেয়েছি।” 13 তখন সদাপ্রভু ঈশ্বর নারীকে বললেন, “তুমি এ কি করলে?” নারী বললেন, “সাপ আমাকে ভুলিয়েছিল, তাই খেয়েছি।”
(আদিপুস্তক ৩: ১১-১৩)
এই পাপের ফলস্বরূপ, সাপটি ঈশ্বর কর্তৃক অভিশপ্ত হয়, মহিলাদের সন্তান ধারণ বেদনা দায়ক হয়, স্বামী হবে তার প্রভু, এবং এডাম এর জন্য, পৃথিবী হবে অভিশ্বপ্ত; এডাম কষ্ট করে এখান থেকে খেতে যাচ্ছিলেন, এবং দিয়ে তিনি এটিতে ফিরে না আসা পর্যন্ত তার মুখমণ্ডলের ঘাম, কারণ তিনি ধূলা হতে এসেছেন এবং ধূলায় ফেরত যাবেন।
14 পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর সাপকে বললেন, “তুমি এই কাজ করেছ, এই জন্য পশুপাল ও বন্য পশুদের মধ্যে তুমি সবচেয়ে বেশি শাপগ্রস্ত; তুমি বুকে হাঁটবে এবং যাবজ্জীবন ধূলো খাবে। 15 আর আমি তোমাতে ও নারীতে এবং তোমার বংশে ও তার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাব; সে তোমার মাথা ভেঙে দেবে এবং তুমি তার পাদমূল দংশন করবে।” 16 পরে তিনি নারীকে বললেন, “আমি তোমার গর্ভ বেদনা খুবই বাড়িয়ে দেব, তুমি কষ্টে সন্তান প্রসব করবে এবং স্বামীর প্রতি তোমার বাসনা থাকবে ও সে তোমার উপরে কর্তৃত্ব করবে।” 17 আর তিনি আদমকে বললেন, “যে বৃক্ষের ফলের বিষয়ে আমি তোমাকে বলেছিলাম, তুমি তা খেওনা, তুমি তোমার স্ত্রীর কথা শুনে তার ফল খেয়েছ, এই জন্য তোমার জন্য ভূমি অভিশপ্ত হল; তুমি সারাজীবন কষ্টে তা ভোগ করবে; 18 আর মাটিতে তোমার জন্য কাঁটা ও শেয়াল কাঁটা জন্মাবে এবং তুমি জমির ওষধি খাবে। 19 তুমি ঘাম ঝরা মুখে খাবার খাবে, যে পর্যন্ত তুমি মাটিতে ফিরে না যাবে; তুমি তো তা থেকেই এসেছ; কারণ তোমাকে ধূলো থেকে নেওয়া হয়েছে এবং ধূলোতে মিশে যাবে।”(আদিপুস্তক ৩: ১৪-১৯)।
সেই থেকে, মানুষ ভালো ও মন্দ জানে।
21 আর সদাপ্রভু ঈশ্বর আদম ও তাঁর স্ত্রীর জন্য চামড়ার বস্ত্র তৈরী করে তাঁদেরকে পরালেন।
22 আর সদাপ্রভু ঈশ্বর বললেন, “দেখ, মানুষ সদসদ-জ্ঞান প্রাপ্ত হবার বিষয়ে আমাদের এক জনের মত হল, এখন যদি সে হাত বাড়িয়ে জীবনবৃক্ষের ফলও পেড়ে খায় ও অনন্তজীবী হয়।” 23 এই জন্য সদাপ্রভু ঈশ্বর তাঁকে এদনের বাগান থেকে বের করে দিলেন, যেন, তিনি যা থেকে সৃষ্টি, সেই মাটিতে কৃষিকাজ করেন।
(আদিপুস্তক ৩: ২১-২৩)।
বাগানে পাপ করার পূর্বে, মানুষের সাথে ঈশ্বরের একটি বৈরিতামুক্ত সম্পর্ক ছিল। কিন্তু যেহেতু মানুষ বদলাতে পারে, বাগানে পাপ করার পর, মানুষের স্বভাবে কিছু একটা ঘটে যা আমাদের ঈশ্বরের সাথে আমাদের বৈরিতামুক্ত সেই সম্পর্ক রাখতে বাধা প্রদান করে।
এখন মানুষের মধ্যে রয়েছে এক দুষ্ট প্রবৃত্তি।
আদিপুস্তক ৬: ৫ বলে: «5 আর সদাপ্রভু দেখলেন, পৃথিবীতে মানুষের দুষ্টতা বড় এবং তার হৃদয়ের চিন্তার সমস্ত কল্পনা সবদিন কেবল খারাপ।»
যিশু এটিকে ব্যক্ত করেছেন মার্ক ৭: ১৫-২৩: এ
15 বাইরে থেকে যা মানুষের ভিতরে যায় তা মানুষকে অপবিত্র করতে পারে না;
16 কিন্তু যা মানুষের ভিতর থেকে বের হয়, সেই সব মানুষকে অশুচি করে।
17 পরে তিনি যখন লোকদের কাছ থেকে ঘরের মধ্যে গেলেন তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে গল্পটির মানে জিজ্ঞাসা করলেন।
18 তিনি তাঁদেরকে বললেন, তোমরাও কি এত অবুঝ? তোমরা কি বোঝ না যে, যা কিছু বাইরের থেকে মানুষের ভিতরে যায়, তা তাকে অশুচি করতে পারে না?
19 কারণ এটা তার হৃদয়ের মধ্যে যায় না, কিন্তু পেটের মধ্যে যায় এবং যেটা বাইরে গিয়ে পড়ে। একথা দিয়ে তিনি বোঝালেন সমস্ত খাদ্য দ্রব্যই শুচি।
20 তিনি আরও বললেন, মানুষ থেকে যা বের হয়, সেগুলোই মানুষকে অপবিত্র করে।
21 কারণ অন্তর থেকে, মানে মানুষের হৃদয় থেকে, কুচিন্তা বের হয়, ব্যভিচার, চুরি, নরহত্যা,
22 ব্যভিচার, লোভ, দুষ্টতা, ছল, লাম্পট্য, কুদৃষ্টি, ঈশ্বরনিন্দা, অভিমান ও মূর্খতা;
23 এই সব মন্দ বিষয় মানুষের ভেতর থেকে বের হয় এবং মানুষকে অপবিত্র করে।
যাকোব বলেন যে
13 প্রলোভনের দিনের কেউ না বলুক, ঈশ্বর আমাকে প্রলোভিত করছেন; কারণ মন্দ বিষয় দিয়ে ঈশ্বরকে প্রলোভিত করা যায় না, আর তিনি কাউকেই প্রলোভিত করেন না; 14 কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের নিজের মন্দ কামনার মাধ্যমে আকৃষ্ট ও প্ররোচিত হয়ে প্রলোভিত হয়। 15 পরে কামনা গর্ভবতী হয়ে পাপের জন্ম দেয় এবং পাপ পরিপক্ক হয়ে মৃত্যুকে জন্ম দেয়। (যাকোব ১: ১৩-১৫)
বর্তমানে মন্দের প্রতি মানুষের একটি ঝোঁক আছে, এমনকি তারা সেটা স্বীকার করতে না চাক বা তাদের কর্মকান্ডকে ন্যায্যতা দিতে চাক।
হিতোপদেশ ১৪: ১২ বলে:
«12 একটি রাস্তা আছে, যা মানুষের দৃষ্টিতে ঠিক,
কিন্তু তার শেষ মৃত্যুর পথ।»
যিরমিয় ১৭: ৯-১০ এ, ঈশ্বর বলেন: «9 সমস্ত কিছুর থেকে হৃদয় আরো বেশি প্রতারক। এটা পীড়িত, কে এটা বুঝতে পারে? 10 আমি সদাপ্রভু, সেই একজন যে মন খুঁজে দেখে, যে অন্তরের পরীক্ষা করে। আমি প্রত্যেকের প্রাপ্য তাকে দিই, তার কাজের ফল অনুসারে শাস্তি দিই।»
ইশাইয়াহ ৫ এ আমরা পড়ি:
20 ধিক তাদেরকে, যারা খারাপকে ভালো আর ভালোকে খারাপ বলে, যারা অন্ধকারকে আলো হিসাবে ও আলোকে অন্ধকার হিসাবে বর্ণনা করে; যারা মিষ্টিকে তেতো ও তেতোকে মিষ্টি বলে বর্ণনা করে! 21 ধিক তাদেরকে, যারা নিজেদের চোখে জ্ঞানী ও নিজেদের বুদ্ধিতে বিচক্ষণ! 22 ধিক তাদেরকে, যারা আঙ্গুর রস পান করায় ওস্তাদ এবং যারা সুরা মেশানোয় পন্ডিত। 23 যারা ঘুষের জন্য দোষীকে নির্দোষ করে এবং নির্দোষকে তার ধার্ম্মিকতা থেকে বঞ্চিত করে।
(ইশাইয়াহ ৫: ২০-২৩)
অতএব, মানুষ কীভাবে পারে, আমরা যেমন তেমন হয়ে, ঈশ্বরের সাথে একটি ভালো বৈরিতামুক্ত সম্পর্ক রেখে যিঁনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, স্বাধীন, এবং যিঁনি তাঁর প্রভুত্ব এবং ইচ্ছার প্রয়োগ করেন, ঈশ্বর যিঁনি পবিত্র এবং পবিত্রতার দাবি করেন, ন্যায্য ঈশ্বর যিঁনি অপরাধীকে নির্দোষ বিবেচিত করেন না? মানুষ তার আত্মা পুনরুদ্ধার করার জন্য এবং ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কীভাবে বদলাতে পারে?
শেষে, রোমীয় ৭: ২১-২৫ এ অ্যাপস্টেল পল বলেন:
21 অতএব আমি একটা মূল তথ্য দেখতে পাচ্ছি যে, আমি ঠিক কাজ করতে চাই কিন্তু প্রকৃত পক্ষে মন্দ আমার মধ্যে উপস্থিত থাকে। 22 সাধারণত অভ্যন্তরীণ মানুষের ভাব অনুযায়ী আমি ঈশ্বরের আইন কানুনে আনন্দ করি। 23 কিন্তু আমার শরীরের অঙ্গে অন্য প্রকার এক মূল তথ্য দেখতে পাচ্ছি; তা আমার মনের মূল তত্ত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পাপের যে নিয়ম আমার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আছে আমাকে তার বন্দি দাস করে। 24 আমি একজন দুঃখদায়ক মানুষ! কে আমাকে এই মৃত্যুর দেহ থেকে উদ্ধার করবে? 25 কিন্তু আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেই। অতএব একদিকে আমি নিজে মন দিয়ে ঈশ্বরের আইনের সেবা করি, কিন্তু অন্য দিকে দেহ দিয়ে পাপের মূল তত্ত্বের সেবা করি।